AD: আল্লাহর জন্যই ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃনা করা
ওমর ফারুখ
আল ওয়ালা (ভালবাসা, সাহায্য করা, রক্ষা করা, অনুসরণ করা ইত্যাদি) এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে কথা, কাজ ও ঈমানের মধ্যে সামজ্ঞস্য থাকা যা আল্লাহক সন্তুষ্টকরে এবংঐ সমস্ত মানুষদের সাথেএকমতহওয়া যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন৷ 'আল ওয়ালা ওয়াল বারা' এমন একটি বিশ্বাস যা মুসলমানদের সকল কাজ ওকথাকে পরিচালিত করে এবং এটার অনুশীলন ও বাস্তবায়নের উপর মু'মিনদের মর্যাদার স্তরের তারতম্য ঘটে৷ এই বিশ্বাস মুসলিমদের মনমানসিকতার ক্ষেত্রেদ্ব্যর্থহীন হবেযাতার সমস্ত কার্যে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে৷ আল্লাহ তা'আলা তাঁর মু'মিন বান্দাদেরকে কাফেরদের সাথেসমস্ত রকমের সাহায্য সহযোগিতাপ্রদর্শন নিষেধ করেছেন৷ এটা তাদের সাথে স্পষ্ট ভালবাসা ও করুণার সম্পর্ককে অথবা আত্মীয়তার পরিচিতির কারণে তাদের সাথে বন্ধুত্বও সহযোগিতারসম্পর্ককে মজবুত বা শক্তিশালী করে৷ মু'মিনরা আল্লাহর শত্রুদের বন্ধু হতে পারে না এবং আল্লাহর ভালবাসা ওতার শত্রুদের ভালবাসাকে একত্রিত করা একজনমানুষেরপক্ষে অসম্ভব কারণ এটা হচ্ছে বিপরীত দুই বস্তু অথবা ব্যাপারের সমন্বয় সাধন; সেজন্য যে আল্লাহকেভালবাসে, সে অবশ্যই তাঁর (আল্লাহ) শত্রুদেরঘৃণা করবে৷ কাফেরদের পৃষ্ঠপোষকতা করা, সাহায্যকরা এবং মু'মিনদের ত্যাগ করা মুসলিমদের জন্য হারাম৷ ঈমান ও কুফরের যে কোন ব্যাপারে কোনসাহায্য সহযোগিতা অথবাসম্বন্ধ নাই৷ শরীয়তের পরিভাষায়' আল ওয়ালা ওয়াল বারা ' রসংজ্ঞা'আল ওয়ালা' (অর্থাৎ ভালবাসা, সমর্থন করা, সাহায্য করা, অনুসরণ): এর শরীয়ী অর্থ হচ্ছে, যে শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতেভালবেসে কথা, কাজ ও বিশ্বাসেসম্পূর্ণ একমত হয়৷ 'আল বারা' (অর্থাৎ ঘৃণা করা, ত্যাগ করা,দূরেথাকা ইত্যাদি): হচ্ছে 'আল-ওয়ালা'র সম্পূর্ণ বিপরীত এবং ঐ সমস্ত সব কিছুর সাথেবিরোধিতা করা, ভিন্নমত পোষণ করা যা আল্লাহ ঘৃণা করেন এবং দোষারোপ করেন৷'আল ওয়ালা ওয়াল বারা'র বিশ্বাসের ক্ষেত্রে চারটি বিষয় জড়িত, যথাঃকথা, কাজ, বিশ্বাস এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বগণ৷ কিছু জিনিস যা আল্লাহকে (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)সন্তুষ্ট করে সেগুলো হচ্ছে- আল্লাহর স্মরণ(যিকির), আল্লাহররাস্তায়জিহাদ করা, আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করা৷" (আল-ক্বাওয়ায়িদুন-নূরানিয়্যাহ আল-ফিকি্বয়াহ) এবং মু'মিনদের ভালবাসা৷ গীবত,যিনা, শির্ক এবংকুফরহচ্ছে এমন কতগুলোজিনিস যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)ঘৃণা করেন এবং এগুলো মু'মিনদেরও অবশ্যই ঘৃণা করতে হবে৷ আল ওয়ালা ওয়াল বারা ঈমানের অত্যাবশ্যকীয় অংশ 'ওয়ালা'রউৎস হচ্ছে ভালবাসা এবং 'বারা'র উৎস ঘৃণা; অন্তর এবং কাজ এই দুটি দ্বারাই এটি বাস্তবেপরিণত হয়৷ 'ওয়ালা' অন্তরঙ্গতায়,উদ্বিগ্নতায় এবংসাহায্যের দিকে উৎসাহিত করে৷ 'বারা' বাধা,প্রতিবন্ধকতা,শত্রুতা এবং অস্বীকারকে ইন্ধন যোগায়৷'ওয়ালা' এবং 'বারা' দুটোই ঈমানের ঘোষণারসাথেজড়িত এবংএর আবশ্যকীয় মূল সূত্রগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করে৷ কুরআন এবং হাদীস থেকে এর প্রমাণ লক্ষণীয় যা নিম্নোক্ত কিছু আয়াতেউল্লেখ করা হলোঃ " মু ' মিনগণ যেন মু ' মিনগণ ব্যতীত কাফিরদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে৷ যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবেনা ; তবে ব্যতিক্রম , যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতাঅবলম্বন কর৷ আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন৷ " (সূরা আলি 'ইমরান ৩: ২৮) এবং তিনিবলেনঃ " বল , তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর , আল্লাহতোমাদেরকে ভালবাসবেন এবংতোমাদর অপরাধ ক্ষমা করবেন৷ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু৷ বল , আল্লাহ ও রাসূলের অনুগতহও৷ যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখো , আল্লাহ তো কাফিরদেরকেপছন্দ করেন না৷ " ( সূরা আলি ' ইমরান ৩: ৩১ - ৩২ ) *. আল্লাহ তাঁর শত্রুদের উদ্দেশ্য উল্লেখ করে বলেনঃ " তারা এটাই কামনা করে যে, তারা যেরূপ কুফরী করেছে তোমরাও সেইরূপ কুফরী কর, যাতেতোমরাতাদের সমান হয়ে যাও৷ তাই তোমরা তাদের মধ্যে থেকে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো নাযতক্ষণ না তারা আল্লাহরপথে হিজরত করে৷" (সূরানিসা ৪: ৮৯) এবং তিনিআরও বলেনঃ " হে মু ' মিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না , তারা পরষ্পর পরষ্পরের বন্ধু৷ তোমাদের মধ্যেকেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণকরলে সে তাদেরই একজন হবে৷নিশ্চয়ইআল্লাহ যালিম সমপ্রদায়কে সৎপ থে পরিচালিত করেননা৷ " ( সূরা মা 'য়িদা ৫ : ৫১ ) " হে মু ' মিনগণ ! তোমরা ঈমানদারব্যতীত অন্য কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না৷ তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে ত্রুটি করবে না ; যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে তাই তারা কামনা করে৷ তাদের মুখে বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাদের হৃদয় যা গোপন রাখে তা আরও গুরুতর৷ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে বিবৃত করাহলো , যদি তোমরাঅনুধাবন কর৷ দেখ , তোমরাই তাদেরকেভালবাস কিন্তুতারা তোমাদেরকে ভালবাসে না অথচ তোমরা সমস্ত কিতাবে ঈমান রাখ আর তারা যখন তোমাদের সংস্পর্শে আসেতখন বলে , আমরা বিশ্বাস করি ; কিন্তু তারা যখন একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতিআক্রোশে তারা নিজেদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ দাঁতেকাটতে থাকে৷ বল , ' তোমাদের আক্রোশে তোমরামর ' ৷ অন্তরে যা রয়েছে সে সম্বদ্ধে আল্লাহ সবিশেষঅবহিত৷ তোমাদের মঙ্গলহলে তারা তাদেরকে কষ্ট দেয় আর তোমাদের অমঙ্গল হলে তারা এতে আনন্দিত হয়৷ তোমরা যদি ধৈর্যশীল হও এবং মুত্তাকী হও তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছুইক্ষতি করতে পারবে না৷ তারা যা করে নিশ্চয়ইআল্লাহ তা পরিবেষ্টন করেরয়েছেন৷ "( সূরা আলি 'ইমরান ৩ : ১১৮ - ১২০ ) আল ওয়ালা ওয়াল বারা বিষয়ে কয়েকটি হাদীসআমরা এই বিষয়ে অনেকগুলো হাদীসের মধ্যেঅল্প কয়েকটি হাদীসএবং সাহাবীদের আলোচনা উল্লেখকরবো যেমনঃ জাবির বিন আব্দুলাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুহতে বর্ণিত, ' মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে , প্রত্যেক মুসলমানকে পরামর্শ দেয়ার এবং প্রত্যেক কাফেরকে পরিহারকরার শপথ করাতেন৷ ' (মুসনাদ ইমাম আহমদ -৪/৩৫৭-৮)
Created at 2012-10-10 05:17
Back to posts