[>>] বিসন্নতা নিয়ে কিছু কথা
ওমর ফারুখ
১) বাবা-মার একমাত্র ছেলে ইভান।বাবাঅনেক বড় শিল্পপতী, দুহাতে টাকা কামান।মা গৃহিনী সারাক্ষন স্বামী-সন্তানের ভাল মন্দের দেখভাল করা নিয়েব্যস্ত।ছেলের জীবনের কোন চাওয়া পাওয়াই অপূর্ণ রাখেনি তার বাবা-মা।বন্ধুবান্ধবদেরসাথে যখন খুশি যেখানে চলেযাওয়ার অনুমতি আছে ইভানের।পূর্ন স্বাধীনতা দিয়েছেন তারবাবা তাকে, যদিও মমতাময়ি মা মাঝে মাঝেশাসন করতে চায় কিন্তু স্বামীর বাধার কারনে সেটা করতে পারেন না।২৩ বছরের এই বয়সে জীবনের সব ধরনের আনন্দ,বিলাসীতা উপভোগ করেছে সে।সুখেই চলছিল তাদের সংসার,কিন্তু হঠাত করেই যেন সেই সুখের সংসারে নেমেএলো শোকের ছায়া।বাবা মার একমাত্র সন্তানটি আত্মহত্যা করেছে সাথে লিখে গেছে একটি চিরকুটে যাতে লেখা"জীবনটাকে খুব পানসেলাগছিল,কোন কিছুতেই মজা পাচ্ছিলাম না।তাই পৃথিবীথেকে বিদায় নিলাম।আমার মৃত্যুর জন্যে কেও দায়ী নয়।" উল্লেখ্য মৃত্যুর কিছুদিন আগে তার মালক্ষ্য করেছে সারাক্ষনকেমন যেন একটাবিষন্ন মন নিয়ে বসে থাকতো ইভান।বন্ধুদের সাথে আড্ডাতে যেত না,নাইট-ক্লাবে যেত না,এমনকি মাস-দুয়েক আগে নতুন পরিচয় হওয়া পাশেরফ্ল্যাটের সিনথির সাথেও কথা বলত অনিহা নিয়ে।মৃত্যুর কিছুদিন আগে বন্ধুরা খেয়াল করেছে নেশা করেও কেমন যেন আর মজা পাচ্ছে না সে,কিংবা নতুন কোন শিকার নিয়ে রেডিসনে রাত কাটাতেও তার মাঝে কোন আগ্রহ দেখা যেতোনা।
২) ভার্সিটির মেধাবী ছাত্রী সুমি।এক ভাই এক বোন।বাবা ইঞ্জিনিয়ার মা ডাক্তার,বড় ভাই সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিংপাশ করে বাহিরে গেছে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে।নম্র আর ভদ্র মেয়ে হিসেবে বন্ধুমহলে তার সুখ্যাতি আছে।গোলগালমুখটাতে চোখে সবসময় কালো ফ্রেমের চশমা ব্যবহার করে।বন্ধুদের সাথে আড্ডার সময় কথা খুব কম বলে।সবাই তার কাছ থেকে স্যারের ক্লাশ লেকচার সংগ্রহ করে আর সেও সবাইকেখুশি মনেই সরবরাহ করে।সবসময় হাসি-খুশি থাকে মেয়েটি।কিন্তু ইদানিং কেমন যেন মনমরা হয়ে বসে থাকে সে।ক্লাশ ঠিকমত করে না,মুখের সেই প্রানবন্ত হাসিটাও এখন আর দেখা যায় না।পড়াশুনা ঠিকমত নাকরার দরুন গত পরীক্ষাতেও অনেক খারাপ করেছে।কিছুদিন আগে যার সাথে তার সম্পর্ক ছিল সেটা ব্রেকআপ হয়ে গেছে।ওর সবচাইতে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী রুপা এসে ওকে স্বান্তনা দিচ্ছে একজন পলাশ গিয়েছে তো কি হয়েছে হাজারটা পলাশ তোর জন্যে পাগল হয়ে ছুটে আসবে।তুই মনমরা হয়ে বসে থাকিসনে, এভাবে পড়াশুনার ক্ষতি করে নিজের কেরিয়ারটা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিস না।
৩) মুহিত, সবে মাত্র ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারেভর্তি হয়েছে।ও যে কলেজথেকে এসেছে সেই কলেজের ও ছিল ফার্ষ্টবয়।অত্যন্ত খেলা পাগল আর চরম দুরন্ত ছেলে মুহিত।সব সময় বন্ধুদের আড্ডা মাতিয়ে রাখত সে।ভর্তি পরীক্ষায় কোন কারনে খারাপ হওয়ার তার আশানুরুপ ভার্সিটিতে সে চান্স পায়নি।আর তাই এখন বন্ধুদের আড্ডাতে সেই আগের মুহিতকে খুজে পায় নাতার বন্ধুরা।সারাক্ষন মনমরা হয়ে থাকে ক্লাশও ঠিকমত করে না সে।
৪) মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে মুনিম।দুই বোন দুই ভাইয়ের মাঝে সবার ছোট সে।বাবা আদর্শ স্কুল শিক্ষক মা গৃহিনী।বাবা অনেক কষ্টে চার ভাই বোনকেই মানুষ করার দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।মফস্বল শহর থেকেপ্রথম ঢাকা এসেছে, ঢাকা ভার্সিটিতে ম্যাথ এ ভর্তি হয়েছে।নাস্তিক ধর্ম গ্রহন করেছে ছয় মাস হল।বেশ স্বাধীন আর মুক্ত মনে হয় নিজেকে এখন।ভালই যাচ্ছিল দিনগুলো, কিন্তু ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাসেল মারা যাওয়ার পর থেকে কেমন জানিমন মরা থাকে সে।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে, "আমারএমন হচ্ছে কেন ?? আমি না কমরেড, মানুষের মৃত্যু মানেইতো একটি matter এর রুপান্তর আরেক matter এ।এটাই প্রকৃতির নিয়ম, তাহলে আমার খারাপ লাগছে কেন ?? আর মানুষের অনুভূতি,চিন্তা এগুলোতো reflection of matter ।আর মানুষ চাইলেই এগুলোকে shape দিতে পারে। তাহলে আমার এমন হচ্ছে কেন ?? আমি কি তবে কমরেড হতে পারি নি।মৃত্যুই যদি এই সত্যার শেষ হয় তবে কি প্রাপ্তি কমরেডের জীবনে??..
৫) আসাদ সাহেব, উনি একজন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।দুই মেয়ে এক ছেলে,সবাই ভার্সিটিতে পড়াশুনা করে।স্ত্রী রাহেলা বেগম বেসরকারী একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন।দুজনের ইনকামে মোটামুটি চলে যাচ্ছে সংসার।ইদানিং আসাদ সাহেবের যে কি হয়েছে কেমনযেন বিষন্ন হয়ে যান মাঝে মাঝে।রাহেলা বেগম খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা,তাই নির্জনে একদিন জিজ্ঞাসা করেছেন স্বামীকে তার কি হয়েছে,আসাদ সাহেব কিছু হয়নি বলে এড়িয়ে গেছেন।আসলে ইদানিং আসাদ সাহেব নিজের সাথে একা একাকথা বলেন,"কি চেয়েছি জীবনে, কি পেয়েছি ? প্রতিদিন একই কাজ, সেই সকালে অফিসে যাওয়া অফিস থেকে বাসায় ফেরা,বাজারে গিয়ে বাজার করা,দিন শেষে ঘুমিয়ে পড়া।পরদিন সকালেউঠে সেই একি রুটিন যেন একটা লোপের মাঝে আমি,লাইফটা একদম একঘেয়ে লাগে এখন।"
৬) অত্যন্ত নম্র আর ভদ্র ছেলে মুসফিক।পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, আর ধার্মিক ছেলে হিসেবে মহল্লার সবাই একনামে চেনে তাকে।যে কারো প্রয়োজনের সময় ডাকলে তাকে পাওয়া যায়।বিয়ে করেছেন খালাতো বোন আনিকাকে বছরখানেক হল।আনিকা প্রথম থেকেই হিজাব পালন করেআসলেও ধর্মের প্রতি তেমন একটা মনযোগীছিলেন না। তবে মুসফিকের সংস্পর্শে এইএকবছরে অনেক মনযোগী হয়েছে।আনিকার মনমানুষিকতার আমূল পরিবর্তন আসার পর তার মনেহল স্বামীকে একটা বিষয় জানানো প্রয়োজন যেটা সে আগে জানায়নি ভিন্ন মন-মানুষিকতার কারনে।একদিন সেতার স্বামী মুসফিক কে জানায় বিয়ের আগে কলেজের একটা ছেলে জোড় পূর্বক তারশ্লীলতাহানী করে তবে এতে তার কোন দোষছিল না।এখন সে বুঝতে পেরেছে বিয়ের আগেই বিষয়টা তাকে জানানো উচিত ছিল যেটা আগেসে বলেনি সম্পর্কটা ভেঙ্গে যেতে পারে এই ভয়ে।মুসফিক স্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে আর তার পরিবর্তন দেখে বিষয়টা মেনে নিল।কিন্তু ঘটনাটা জানার পর থেকে সে কেমন জানি আর মনের ভেতর স্বস্থি পাচ্ছে না।কেমন জানি বিষন্ন হয়ে থাকে সারাদিন।
=================
Created at 2012-10-10 03:36
Back to posts